,

জমি ফিরিয়ে না দেওয়ায় ৩৬ মামলা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

জেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: ২০০৪ সালে বিক্রি করে দেওয়া জমি ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ভাগনে মাহফুজ ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে একের পর এক ৩৬টি মামলা দিয়েও ক্ষান্ত হননি মামা ফিরোজ আহম্মেদ। এক পর্যায়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে ভাগনে ও তার স্ত্রীকে পিটিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। স্থানীয়রা মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করতে পারলেও পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে মাহফুজের বসতঘর ও আসবাবপত্র। মামলার প্রধান আসামী ফিরোজ সাতক্ষীরা শহরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গত এক সপ্তাহেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উপরন্তু মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাথার সিটি স্ক্যান করতে নিয়ে আসা শ্যামনগর উপজেলার শ্রীফলকাটি গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে ভ্যানচালক মাহাফুজুর রহমান জানান, ২০০৪ সালে মামার বাড়ির ৩২ শতক জমি কেনেন তারা। পরবর্তীতে ওই জমি ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সম্পত্তিটুকু ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি না থাকায় মামা ফিরোজকে জমি ফিরিয়ে দিতে রাজি হননি। ফলে তাকে, তার স্ত্রী, বাবা, মাসহ যারা হামলা মামলার প্রতিবাদকারি প্রতিবেশী তাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি মামলা খারিজ হয়ে গেছে। মামলা চালাতে যেয়ে তারা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

মাহাফুজুর রহমান আরো জানান, তার মামা ফিরোজ সাতক্ষীরা শহরের সুলতারপুরে বিয়ে করে সেখানেই অবস্থান করেন। আদালতে কাজ করেন প্রভাব খাটিয়ে মামলায় হাজিরা দিতে গেলে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেন। আদালতের ভিতর থেকে তারা বের হতে পারেন না ভয়ে। আইনজীবীর সহায়তার তাদের আদালত থেকে বের হতে হয়।

মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো দায়ের কোপ ও সেলাই এর চিহ্ন দেখিয়ে মাহাফুজুর বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পৌনে দুটোর দিকে মামা ফিরোজ আহম্মেদ, তার দুই মেয়ে, নানী আমেনাসহ সাতক্ষীরা থেকে ভাড়া করে আনা সাত/আট জন হাতে দা ও লোহার রড নিয়ে তাদের বাড়িতে ঢোকে। এ সময় তার স্ত্রী ফাতেমাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়। ঘরের মধ্যে ঢুকে ফিরোজ তাকে এলোপাতাড়ি মাথায় কুপিয়ে ও অন্যরা পিটিয়ে জখম করে ঘরের দরজায় ছিকল লাগিয়ে দিয়ে বসতঘরের চারিপাশে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘর দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাইরে বের করে আনে। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা আগুন নেভানোর আগেই সবকিছু পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। রবিবার তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে সেখানেও তার ওপর হামরা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপ পরিদর্শক সেলিম রেজা জানান, মামলার ৫ জন আসামি জামিন নিলেও ফিরোজ আহম্মেদ জামিন নেননি। তাকে যেকোনো স্থানে দেখা গেলে তাকে অবহিতত করার জন্য বাদীপক্ষকে বলা হয়েছে। তাাকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর